শেরপুর-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার শেষ নেই এলাকায়। কারণ, টানা চারবার নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী আতিউর রহমান আতিকের বদলে জাতীয় পার্টি আসনটি দাবি করছে।
জাতীয় পার্টি থেকে আবার শোনা যাচ্ছে দুটি নাম। এরা হলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশদ এরশাদ এবং স্থানীয় নেতা ইলিয়াস উদ্দিন।
মহাজোটের প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলও যে খুব স্বস্তিতে আছে তা নয়। কারণ, সেখানেও প্রার্থিতা নিয়ে আছে নানা সমীকরণ।
২০০৮ সালে এই আসন থেকে বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হন জামায়াতে ইসলামীর মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধে তার ফাঁসি হয়েছে। আর এরপর দলটির তৎপরতা ছিল না এবার। তবে হঠাৎ করে মানবতাবিরোধী অপরাধীর ছেলেকে নিয়ে তৎপর হয়েছে জামায়াত।
সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৬০ হাজার ৭৮৭ জন। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত।
আ.লীগ না জাপা?
১৯৯১ সালে এই আসনে জাতীয় পার্টি জয় পেলেও ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচন থেকে থেকে টানা জিতে আসছেন আওয়ামী লীগের আতিউর রহমান আতিক।
তবে এবার ক্ষমতাসীন দলে কোন্দল বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ সমর্থকরাও দলের ঐক্যে জোর দিচ্ছেন।
নেতারা জানান, টানা চার বারের সংসদ সদস্য আতিককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এবার ভোটের মাঠে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানোয়ার হোসেন ছানু। সব মিলিয়ে এবার মনোনয়ন ফরম তুলেছেন ১৭ জন, যাদের সিংহাগই আসলে দুই নেতার অনুসারী।
তবে গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ীদেরকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে না। এরপর অনেকটাই নির্ভার হন আতিক। যদিও ছানুর সমর্থকদেরকে এখনও প্রকাশ্যে কাছে পাচ্ছেন না আতিক।
এই দুই পক্ষের বিভেদকে পুঁজি করে আবার নড়েচড়ে বসেন জাকের পার্টির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সাল এবং জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিন।
এক পর্যায়ে মোস্তফা আমির ফয়সালের দৃষ্টি ঢাকা ও ফরিদপুরের দিকে সরানো সম্ভব হলেও এখনও সরানো সম্ভব হয়নি ইলিয়াস উদ্দিনকে। মহাজোট থেকে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে তিনি দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইলিয়াস চাইছেন আওয়ামী লীগ যেন আসনটা তাকে ছেড়ে দেয়। আবার রওশনও এই আসনটি চাইছেন বলে তার দলের নেতারা জানাচ্ছেন।
এই কারণে মহাজোটের প্রার্থী আতিক না রওশন এরশাদ বা ইলিয়াস- এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে উৎসুক মানুষের মাঝে। ১৯৯৬ সালে এই আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়েছিলেন রওশন এরশাদ।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছানু অবশ্য এখনও হাল ছাড়ছেন না। তিনি বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানদের না বলে দিলেও ক্ষেত্রমতে বিষয়টি শিথিল করা হচ্ছে বলেই শুনেছি। তাই এখনও অপেক্ষা করছি। তবে আমি মনোনয়ন না পেলেও পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আন্দোলনে থাকা জনগণ মাঠ ছাড়তে দেবে এমনটা মনে করি না।’
বিএনপি না জামায়াত?
জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি হওয়ার পর এখানে দলটির নেতাকর্মীরা অনেকটাই চুপসে যায়। তবে সম্প্রতি এই নেতার ছেলে ওয়ামি জামানকে ঘিরে আবার তৎপর হয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।
যদিও এতদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী এই আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত ছিলেন।
সন্ত্রাস-নাশকতার মামলায় প্রায় চার মাস ধরে কারাগারে থাকা হযরতের ঋণ কেলেঙ্কারির সমস্যাও আছে। আর খেলাপি ঋণদাতার ভোটে দাঁড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায়, তার প্রার্থিতা নিয়ে আছে সংশয়।
এ কারণে এই বিএনপি নেতা সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কাকে দিয়েও দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনিয়েছেন। তিনি নিজে ভোট করতে না পারলে তৈরি করা মাঠ যেন মেয়ে ব্যবহার করতে পারে, এটাই চাইছেন হযরত।
জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমানসহ পাঁচ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসেছেন।